শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে বরিশাল নগরীর ওয়াপদা আর্মি ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে আসা হয়। এর আগে গৌরনদী ক্যাম্পে ভীষণ টর্চার করা হয়। আমার পায়ের পাতা চিড়ে দেওয়া হয়েছিল। কী কারণে বরিশালের ওয়াপদায় আনা হয়েছিল তা জানি না। আমার সাথে আমার বন্ধু আনোয়ারকেও নিয়ে আসা হয়,’ বলছিলেন সেসময় ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী এমএজি কবীর ভুলু। বাংকারে ঢুকে আমরা আতকে উঠি।
বাংকারের মধ্যে আমরা কয়েকজন নারীর মৃতদেহ পাই। কয়েকজন অবশ্য তখনও জীবিত ছিল, তবে কারো শরীরে এক টুকরো কাপড়ও ছিলনা। আমরা তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেই। পুরো এলাকার সর্বত্র ধ্বংসযজ্ঞের চিহৃ ছড়িয়ে ছিল’। বরিশাল শত্রুমুক্ত হওয়ার বরিশাল তথা দক্ষিণাঞলের সবচেয়ে বড় গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র ওয়াপদা কলোনীর চিত্র এভাবেই বর্ণনা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ। তিনিই প্রথম বাংকারে ঢুকেছিলেন।ওয়াপদা কলোনীতে টানা ১৯ দিন পাকিস্তানী হানাদারদের টর্চার সেলে (নির্যাতন কেন্দ্র) বন্দী ছিলেন বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা এএমজি কবীর ভুলু।
সেখানে পাকিস্তানি বাহিনির গণহত্যা ও ভয়াবহ নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে তিনি এখনও ডুকরে কেঁদে ওঠেন। তিনি বলেন, ওয়াপদা কলোনীর একাধিক টর্চার সেলে বাঙ্গালী নারী-পুরুষদের ধরে নিয়ে সীমাহিন নির্যাতনের পর সাগরদী খালের একটি সেতুতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। অগনিত গণহত্যার নিরব স্বাক্ষী এই ওয়াপদা ক্যাম্প। এএমজি কবীর ভুলু বলেন, গণহত্যার স্মারকগুলো সংরক্ষন করায় আগামী প্রজন্ম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির বর্বরতার ইতিহাস জানতে পারবে। গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল শত্রুমুক্ত হওয়ার দিনে (বরিশাল মুক্ত দিবসে) টর্চার সেল ও বধ্যভূুমি সংরক্ষন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।